এক দ্বীপে দুই সপ্তাহে ৯০০-রও বেশি ভূমিকম্প—শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনাটি বাস্তব। জাপানের টোকারা দ্বীপপুঞ্জে সম্প্রতি এ ব্যতিক্রমী ভূকম্পন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।
জাপান টাইমসের বুধবার (২ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এত বিপুলসংখ্যক ভূমিকম্পে দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনটি জাপানের সিসমিক স্কেলে লোয়ার ৫ মাত্রায় রেকর্ড করা হয়েছে।
জাপান আবহাওয়া বিভাগ (জেএমএ) জানিয়েছে, বুধবার বিকেল পর্যন্ত মোট ৯১১টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শিন্ডো লোয়ার ৫, ১৮টি শিন্ডো ৪ এবং বাকিগুলো শিন্ডো ৩, ২ এবং ১ তীব্রতার ছিল। সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি ছিল ৫.৫ মাত্রার। বুধবার বিকেল ৩টা ২৬ মিনিটে তোশিমা গ্রামে শিন্ডো লোয়ার ৫ তীব্রতায় আঘাত হানে।
আকুসেকি দ্বীপের স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রধান ইসামু সাকামোতো জাপান টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি আশঙ্কা করছেন যে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে। তিনি বলেন, এতটা খারাপ হবে বলে আমি আশা করিনি। সোমবার প্রথম শিন্ডো লোয়ার ৫ ভূমিকম্পের পর ভেবেছিলাম কম্পন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও তার কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। প্রথমে একটি বড় শব্দ হয়, তারপর মাটি উল্লম্বভাবে কাঁপতে শুরু করে — এটা খুবই আতঙ্কজনক।
জেএমএর ভূমিকম্প ও সুনামি বিষয়ক কর্মকর্তা মাসাশি কিয়োমোতো বলেন, এই ভূমিকম্পের সিরিজের কারণ এখনও অস্পষ্ট। দুই বা চার বছর আগের ভূমিকম্পের তুলনায় আমরা এখন দ্বিগুণেরও বেশি ভূমিকম্প অনুভব করছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখনও জানি না কেন এটি ঘটছে বা ভবিষ্যতে কী হবে।
এর আগে, বুধবার ভোর ৪:৩২-এ ৫.০ মাত্রার আরেকটি শিন্ডো লোয়ার ৫ ভূমিকম্প টোকারা দ্বীপপুঞ্জে রেকর্ড করা হয়। কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি। এই ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল প্রায় ১৬ কিলোমিটার।
কিয়োমোতো বলেন, ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরতায় ঘটে যাওয়া অগভীর ভূমিকম্পগুলো যদি উচ্চ মাত্রায় আঘাত করে, তবে সুনামির ঝুঁকি বেশি হয়। তিনি বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্পনগুলো ২১ জুন থেকে শুরু হয়েছে। সকাল ৫টার দিকে শিন্ডো ১-এর নিচে দুর্বল ভূমিকম্প হিসেবে এগুলো শুরু হয়, যা পৃষ্ঠে খুব কমই অনুভূত হয়েছিল। তবে, সকাল ৮টার দিকে বাসিন্দারা অনুভব করতে পারে এমন ভূমিকম্পের ঘনত্ব বাড়তে শুরু করে।
অতীতে এই দ্বীপপুঞ্জে অনুরূপ ভূমিকম্প দুবার আঘাত হেনেছিল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৪৬টি শিন্ডো ১ বা তার বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল, এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৩০৮টি কম্পন রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে আকুসেকি দ্বীপে ৬.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প শিন্ডো আপার ৫ তীব্রতায় পৌঁছেছিল।