পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানি একটি মহিমান্বিত ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই এই কোরবানি আদায় করা হয়। কোরবানির বাহ্যিক রূপ হলো পশু জবাই, কিন্তু এর মূল লক্ষ্য হলো অন্তরের খোদাভীতি ও তাকওয়া প্রকাশ করা।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
“কোরবানির মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং কোরবানির মধ্য দিয়ে তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহভীতি তাঁর কাছে পৌঁছে।”
(সুরা হজ: আয়াত ৩৯)
কোরবানি যেন কবুল হয়, তার জন্য নিয়ত বিশুদ্ধ করা এবং সম্পূর্ণ হালাল উপার্জনের মাধ্যমে কোরবানি আদায় করা জরুরি। বিশেষ করে যারা অংশীদার ভিত্তিক কোরবানি করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় ও সতর্কতা।
✅ অংশীদারভিত্তিক কোরবানির করণীয়:
১. হালাল উপার্জন নিশ্চিত করা
কোরবানি হতে হবে একেবারে হালাল উপার্জনে। যদি কোনো শরিক হারাম উপার্জন বা সুদের টাকা দিয়ে অংশ নেয়, তাহলে কারো কোরবানি আদায় হবে না।
ইসলামিক ফিকাহগ্রন্থগুলোতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে—
“ঘুষ, চাঁদাবাজি, সুদ অথবা অবৈধ উৎসের অর্থ থেকে কেউ শরিক হলে পুরো কোরবানি বাতিল বলে গণ্য হবে।”
(হিন্দিয়া: ৫/৪২০; ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১১/২১৯)
২. নিয়ত বিশুদ্ধ থাকা
প্রত্যেক শরিকের নিয়ত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কারো যদি উদ্দেশ্য থাকে কেবল মাংস খাওয়া, তাহলে কারো কোরবানিই গ্রহণযোগ্য হবে না।
(আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২৬)
৩. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য না থাকা
যদি কোনো শরিক কোরবানি করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, তাহলে সকলের কোরবানি বাতিল বলে গণ্য হবে।
(ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১১/২৪২)
❗ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা
ইবাদতের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা জরুরি। কোরবানির মতো মহান ইবাদতের প্রতিটি ধাপে খেয়াল রাখা ঈমানের দাবি। অংশীদারদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে কৌশলে এবং বিনয়ের সঙ্গে।
📜 কোরআনের নির্দেশনা:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে।”
(সুরা বাকারা: আয়াত ২৬৭)
✨ উপসংহার:
কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের নাম নয়, এটি একজন মুসলমানের তাকওয়ার প্রতীক। হালাল উপার্জন, বিশুদ্ধ নিয়ত এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত থেকে কোরবানি আদায় করলে তবেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়। তাই ঈদের উৎসবকে অর্থবহ করতে হলে, ইবাদতের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।