নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান-কে অপসারণের দাবিতে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শনিবার সকাল থেকেই এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়সহ সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট দফতরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে সকাল থেকেই সমবেত হয়েছেন তারা। আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে চলছে এই কর্মসূচি।
সকাল ৯টার মধ্যে যারা কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন তারা ভেতরে থাকলেও এরপর থেকে রাজস্ব ভবনের মূল ফটকে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ভবনের ফটক বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর ফটকের বাইরে ফুটপাত ও রাস্তার একাংশ জুড়ে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির ঘোষণা আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এর আগের দিন, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়:
“কর্মরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে কিংবা দেরিতে অফিসে এলে সরকারি বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও একটি বিজ্ঞপ্তি আসে। সেখানে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনা ও অধ্যাদেশ সংশোধনের আশ্বাস দেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়,
“এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এই সভায় অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বোর্ডের ১৬ জন সদস্য অংশ নেন।”
তবে ওই বৈঠকে এনবিআর আন্দোলনকারীদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত এলে ‘আজকের মধ্যেই’ সমাধান সম্ভব। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী সপ্তাহে আরও একটি বৈঠক হবে, যেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা নিজেদের অবস্থানে অনড়।
শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে তারা বলেন,
“আজ অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এসেছে, যা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নজরে এসেছে।”
তারা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তারা আশ্বাস দেন, সংকট সমাধানে যেকোনো সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত মাসে এনবিআরকে দুই ভাগ করে ‘রাজস্ব নীতি’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরকার পরবর্তীতে পিছু হটে জানায়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের আগে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। দায়িত্বে ফিরে তিনি আন্দোলনরত কয়েক কর্মকর্তাকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ করেন এবং কিছু সেমিনারের জন্য কক্ষ বরাদ্দ না দেওয়াসহ নানা সিদ্ধান্তে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দূরত্ব আরও বাড়ে।
পলিটিক্স/মি